পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০১০

হাউজ দ্যাট!

সকালের মেঘাচ্ছন্ন মাঠ আর কর্দমাক্ত আকাশ। এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে নটআউট থাকা সহজ কথা না। সেট হয়েও কত ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায়! কিন্তু তাকে আউট করা যাচ্ছে না। একেবারে ঘাম ছুটিয়ে ছাড়ছে বলা যায়।

লাঞ্চে গেলেন নটআউট অবস্থায়।

এদিকে ক্যাপ্টেনের চিন্তিত মুখ, কপালের পাশে ঘামের চিকন রেখা। এর ওর কাছ থেকে টিপস নিচ্ছেন কীভাবে এই শক্ত লাইনআপকে লুজ মোশনের মত ঝেড়ে ফেলা যায়। বারবার পজিশন বদলেছেন, বিভিন্নভাবে কয়েকবার চাপ সৃষ্টি করেছেন- কিন্তু যে লাউ সেই কদু। ফাস্ট, স্পিন, মিডিয়াম, স্লো, রাউন্ড দ্য উইকেট, কোনোটাতেই কাজ হচ্ছে না।

একেবারে পরিশ্রান্ত অবস্থা। লাঞ্চে তাই ঠেসে খাওয়া হলো। পেট ভরা থাকলে এনার্জিও থাকবে, চাপতেও পারবেন অনেকক্ষণ, বলা যায় না, আউট হলেও হতে পারে। কিন্তু এই স্ট্র্যাটেজি বুমেরাং হয়ে দেখা দেয়ায় টি ব্রেকেও কোনো আউট হলো না।
সারা দিনেও না।
পরদিন সকাল সকাল অলআউট করতে না পারলে খবর আছে। কীভাবে আউট করবেন সেই চিন্তায় ক্যাপ্টেনের রাতে ঘুম হলো না।

হা কপাল, সেদিনও কেউ আউট হলো না।
এমনকি তার পরদিনও না!

ক্যাপ্টেনের জন্য এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কী হতে পারে? হে খোদা, কি পাপে এত বড় শাস্তি? এর চেয়ে যে মরণ ভালো! এত কষ্ট, এত কষ্ট! ক্যাপ্টেনের মনে হচ্ছে চিত্ কার করে কেঁদে উঠেন। তিনদিনেও আউট করতে পারলেন না। বিশ্বরেকর্ড হয়ে গেছে মনে হয়। মনে হচ্ছে বুকের নীচে ফেটে যাবে, এত কষ্ট। কোন সাংবাদিককে বলবেন এই বেদনার কথা? আশেপাশে শুভ্র ভাই থাকলে হয়ত তাকে বলা যেত, তিনি বুঝতেন।

তৃতীয় দিন রাতে আর থাকতে না পেরে ফিজিওর রুমে গিয়ে ঢুকড়ে কেঁদে উঠলেন। ফিজিও সে রাতের মত তার পানপর্ব সেরে উঠি উঠি করছিলেন। সব শুনে মুচকি হেসে ক্যাপ্টেনের হাতে ধরিয়ে দিলেন একটা বোতল। আজীবন সংগ্রামী খেলোয়াড় এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ একবার বোতলের পানে আরেকবার ফিজিওর পানে চেয়ে বেদনার্ত দেবদাসের মত ঢকঢক করে গলায় ঢেলে দিলেন বোতলের সবটুকু তরল।

কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো পেটে। হঠাত্ ই বাধভাঙ্গার শব্দ শুনতে পেলেন যেন, বারবার বারবার। পা টলছে। কিন্তু একি, কোথা থেকে যেন রাজ্যের আত্মবিশ্বাস এসে ফুলে ঢোল বানিয়ে দিয়ে গেল তাকে।
এগুতে লাগলেন তিনি, যেন গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে বিধ্বংসী বোলার, ছোট্ট একটা লাফে ক্রিজে ল্যান্ড করলেন যেন রিচার্ড হ্যাডলি। ওভার দ্য উইকেট পজিশনে, বুক ভরে একটা নিশ্বাস টেনে নিয়ে, চোখ বুঁজে, মুঠি বন্ধ করে, সর্বশক্তি দিয়ে দিলেন একটা চাপ।
এবং আবার।
তারপর আবার। বয়কটেরও সাধ্য নেই সেই চাপে আঁকড়ে পড়ে থাকার। ধসে গেল সকল প্রতিরোধ। খোদাবক্স চিত্ কার করে উঠলেন, 'এএএএববববং আউট'!

মনে পড়লো, ফিজিওর হাত থেকে নেয়া বোতলের গায়ে লেখা ছিলো, 'জোলাপ,আধাঘন্টায় অলআউট'!

তিনদিন চেপে থাকার দুঃসহ স্মৃতি খালাস করতে করতে ক্যাপ্টেনের মনে হলো, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। প্রশান্তমুখে টয়লেট সেরে বের হলেন তিনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন